আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ:

টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে অহরহ লাইসেন্স বিহীন ঔষধের ফার্মেসী গড়ে তুলেছে এক শ্রেনীর হাতুড়ে ডাক্তার। তাদের হাতে প্রতিনিয়ত হয়রানী ও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে সাধারন অসহায় গরীব রোগীরা। বিশেষ করে রোহিঙ্গা বসতির আশপাশ ও গ্রামাঞ্চলে এর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। আর এসব ফার্মেসীতে রয়েছে রোহিঙ্গা ও দেশীয় কিছু হাতুড়ে ডাক্তার। অসহায় রোগীদের কাছ থেকে যেমন তেমন চিকিৎসার নাম দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। এসব ডাক্তারদের নেই কোন সার্টিফিকেট ও বিক্রির ড্রাগ লাইসেন্স।  বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন ঘুরে ও কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এক রোহিঙ্গা কথিত ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ১৫ বছর যাবৎ তিনি ডাক্তারী পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। সেই ডাক্তারের বয়স বর্তমানে ৩২ বছর। ওই কথিত ডাক্তারের কথামতে ১৭ বছর বয়স থেকে সে ডাক্তারী পেশা শুরু করেছে। আরো জানা যায়, মিয়ানমার রাখাইনের বাগঘোনা গ্রামে ১২ বছর যাবৎ ডাক্তারী করেছিলেন। তার বংশেও আরো কয়েকজন ডাক্তার রয়েছে। এই পেশাটি তাদের বংশগত। তিনি আরো জানায়, ২০১২ সালে মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হলে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের এক আত্মীয়ের বাড়ীতে আশ্রয় থাকতেন। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয়ে চলে আসলে এই সুযোগে সে নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরের আশপাশে আশ্রয় নিয়ে গড়ে তুলেন ফার্মেসী ও শুরু করেন তার ডাক্তারী পেশা। তার ফার্মেসীতে শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে দেখা যায়, মোঃ আয়ুব (২৮) নামে এক রোহিঙ্গা রোগীকে সেলাইন দেওয়া হচ্ছে। ওই রোগী জানায়, শরীর দুর্বল ও মনে অশান্তি বোধ করার কারণে ডাক্তারে কাছে এসেছে।

ওই রোগীর কি হয়েছে তা ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করা হলে জানায়, হার্টের রক্ত পড়ে গেছে। তাই বি-৫০ ও রানিসন নামক ইনজেকশন দিয়ে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ওই রোগী গত এক মাস আগে রাখাইনের কুইন্নাপাড়া গ্রাম থেকে পরিবারের ৫ জন নিয়ে এদেশে আশ্রয়ে এসে নয়াপাড়ায় অবস্থান করছেন।

এছাড়া কথা হয় অপর এক রোহিঙ্গা নারী রোগী মরিয়ম খাতুনের (৩৫) সাথে।

সে জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হঠাৎ নিঃশ্বাস ভারী হয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে। ওই ডাক্তার গিয়েই চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলেছে। তার ফার্মেসীতে দেখা গেছে শিশুরোগীদের নিয়ে অভিভাবকরা অপেক্ষায় আছে চিকিৎসার জন্য।

এমন শুধু এক/দুইজন রোহিঙ্গা ডাক্তার নই। কয়েক জন ডাক্তার লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী গড়ে তুলে যেনতেন ভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সাধারন গরীব মানুষগুলো প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হয়ে অনেকে মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে। এসব ফার্মেসী ও হাতুড়ে ডাক্তারদের চিহ্নীত করে ব্যবস্থা গ্রহনের করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন টেকনাফের সচেতনমহল।

এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ সুমন বড়–য়া জানান, কোন দোকান বা ফার্মেসীতে ঔষধ বিক্রি ও চেম্বার বসিয়ে ডাক্তারি করার বিষয়ে তদারকির এখতিয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেই। ইহা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা জেলা সিভিল সার্জন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বাচাই পূর্বক ব্যবস্থা নিতে পারেন বলেও জানান তিনি।